Sunday, July 29, 2018

ভালোবাসার নির্বাসন

মাতৃভাষা ও ভালোবাসা

‘আমি তোমায় ভালোবাসি’ শুধু তোমাকে
চেতনে-অবচেতনে, উত্থানে-পতনে
শৈশবে-কৈশরে, যৌবনে, ষোলকলা জীবনে
জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে প্রতিধ্বনিত
প্রতিবিম্বিত আর প্রতিসঞ্চালিত
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।


মাতৃভাষার প্রতীক অ-আ-ক-খ বর্ণমালা
ব্যঞ্জনের সাথে স্বরবর্ণের ওতপ্রোত মিশেল
তবেই না অতি পরিচিত সর্বত্র প্রচলিত
‘ভালোবাসা’ বর্ণজটের শৈল্পিক উদ্ভব।
ধনীর অট্টালিকায়, গরিবের কুঁড়েঘরে
নদীর জলজ আস্তরে, বাতাসের
উড়ন্ত শরীরে, ‘ভালোবাসা’ উৎকীর্ণ
সুনীল গগনের কোমল মসৃণ চাদরে।


মাতৃভাষার বদৌলতে এতো ভালোবাসা
স্ট্রিটে, পার্কে, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে
মুখে-মুখে, চোখে-চোখে, মননে ও মানে
উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ছন্দ ও গানে
ইতিহাসে, বর্তমানে, ভবিষ্যতে, অনুক্ষণে
সংকটে-সংগ্রামে, গভীর ঘন দহনে
স্পর্শে, অনুভবে, আঘাতে-প্রতিঘাতে
ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, অনুযোগ-অনুশোচনায়
ভালোবাসি। মাতৃভাষা ও ভালোবাসা
আমার দু’টি চোখ, চোখের প্রত্যাশা।


তোকেই ভালোবাসি তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে
যৌবনের অনুচ্চারিত অলিখিত প্রকাশে
তোর পদতলে একটি শব্দ ‘ভালোবাসা’।
মুখের ধ্বনি, নয়নের মণি, অঙ্গের ইঙ্গিত
ভাবের অনুভব, সবটুকুই আমার মাতৃভাষা।



অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত

সব মানুষের নাকি একটি
চেনা অচেনা অতীত আছে
আর কবিদের অতীত তো
কবিরা কাঁধে ঝুলানো ব্যাগেই রাখে
তবে আমার কোন ধূলোয় ধূসরিত অতীত নেই
ব্যাগে রাখার মুরোদ খুঁজছি প্রতিনিয়ত।


সব শিশুরই অবুঝ অতীত থাকে
সেই অতীতে মাতৃস্তনের পাশে অথবা
নিকানো উঠোনে হামাগুড়ি দিতেই ব্যস্ত।


প্রতিটি কিশোরেরও একটি শৈশবী অতীত হারায়
সেখানে সে জননীর আঁচলে মুখ লুকায়
বড়দি’র ওড়নায় খোঁজে হাজার বাহানা।
তবে আমার শৈশবের কিছু অতীত
আজ প্রবাসী, সাত সমুদ্দুর তের নদীর ওপারে
মেম সায়েব হয়ে লাক্সারি জীবন কাটায়
আর পথ হাতড়ে ফেরে অন্য জীবনের আঁধারে।


তরুণদের কৈশোরী অতীত থাকাতো খুব স্বাভাবিক
যেমনি আমার আছে, তবে সঙ্গে নেই
এক কিশোরীর সাথে অন্যের ঘরণি হয়ে
হারিয়ে যাচ্ছে ছেলে-মেয়েদের চেঁচামেচিতে।


শেষ অবধি তারুণ্য অতীত নিয়ে কথা
সেও আত্মীয়তার গ্যাঁড়াকলে কাঁতরাতে কাঁতরাতে
বৈরী সময়ের নিকট হেরে গেল অকালেই।


নবযৌবনের অতীতও চড়াই উৎরাই পথে
এখন আছে চাঁদ-তারা ভরা একটি আকাশ
অচেনা দূরে ঝুলন্ত উদ্যানের মতো
শূন্যতার আড়ালে আছে ইথার ধ্বনির ন্যায়
প্রভাতি পাখির দুর্বোধ্য সুর।


অতীতকাল যেমনি হয়েছে অতীত
এই বর্তমান, ওই ভবিষ্যতও একদিন
অতীত হবে অনন্তের ইশারায়, মৃত্যুর যবনিকায়।


আজ আমার ছেঁড়া ছেঁড়া কিছু অতীত
আর বিষণœ বর্তমান নিয়েই বসবাস
ভবিষ্যত অনেকটা অলীক কল্পনার ধাঁধা।


অতীত, তুমি ফিরে এসো না
বর্তমান, তুমি আর হেসো না
ভবিষ্যত, তুমি ভালোবেসো না।


অতীত- পেছনের কিছু চোখ
বর্তমান- সহবাসরত দু’চোখ
আর ভবিষ্যত- অন্ধ সহস্র চোখ।


সেই তোমার জন্য

সেই কবে কথা হয়েছিলো
সেই কবে দেখা হয়েছিলো
কবে রেখেছো অনিমেষ দিঠি
সেই কবে লিখেছো শেষ চিঠি।


সেই মুখোমুখি বসার স্মৃতি
সেই পায়ে পায়ে চলার স্মৃতি
      অপেক্ষার প্রহর
      রৌদ্রজ্জ্বল নগর
সেই আশা-নিরাশার মৌন কথা
সেই যে স্বপ্ন দেখার যুক্ত ব্যথা
      তুমি অতঃপর
      দাওনি উত্তর
বেশ কেটে গেলো দিন অনেক
হয়ে গেলাম আমি অচেনা এক


ভুলো মন ভুলে গেলো সব আজ
ভুললো না সেই চোখের কারুকাজ
      নদী তুমি পাথর
      কার হৃদয় আকর?


তুমিই শক্তিধর

বরং তুমিই শক্তিধর
তুমি যদি বিছিয়ে দাও তোমার আঁচল
আমি পেরুতে পারবো না তোমার দৃষ্টিসীমা
তোমার চোখে থাকলে অনুমতির স্বাক্ষর
স্ফীত বক্ষে যদি থাকে আহ্বানের শব্দ
তবে সহসা আছড়ে পড়বো তোমাতে
কারণ তোমার শক্তির সম্বোহনে
         আমি পরাজিত নেশাগ্রস্ত।


তারপরও আমি পুরুষ
তা স্বীকার করতে হবে পৃথিবীর
          তাবৎ কমনীয় রমণীকে
আমার পৌরুষদীপ্ততা প্রতিটি নারীর
       স্মরণে-মরমে একান্ত অন্বেষা
এখানেই আমাদের শক্তি তাদের মাঝে
সম্মিলনে সংগোপনে সঞ্চারিত।


তুমি বসরাই গোলাপ হতে পারো
আমি তবু মরু সাইমুম ঝড়
আমাতে আছে রুক্ষ স্বভাব
তোমাতে শুধু নরোম পাপড়ি।


তবুও তুমিই শক্তিধর
কারণ ভালোবাসা তোমাকে করেছে উর্বর।


বৃষ্টিভেজা পথিক

ঝমঝম বৃষ্টি, একদম রৌদ্র ঝলসানো
দুপুরে হঠাৎ আকাশ ঝর্নার বর্ষণ
মনে হলো শ্রাবণীর বিদায়ি অশ্রু,
তখন তোমার পাশে ছিলাম, তুমি আমার পাশে
বৃষ্টির ফোটা যখন অন্ধকার চুল বেয়ে
সুডৌল চিবুক স্পর্শ করে তোমার
বুকের কার্নিশে জমা হচ্ছিল অনবরত
তোমার সে-কী উচ্ছ্বলতা, বৃষ্টিভেজা মুখ।


সেদিন পাশাপাশি পথিকই ছিলাম বটে
আমার চকিত চাহনি, লাজরাঙা তুমি।
তোমার মৃণাল বাহু আটক আমার নেত্রকোণায়।
স্নাত পাদদেশ হতে সরে গেলো বক্ষাবরণ
বাতাসের সাথে তোমার দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক হাতাহাতি
এ বেহায়া চোখদ্বয় অলক্ষে তোমার
চোখ এড়িয়ে চিবুক বেয়ে একেবারে অনাবৃতাংশে
অপূর্ব সৌন্দর্য, অতুলনীয় তোমার স্রষ্টা।


কার প্রেমে পড়বো- তোমার, নাকি তোমার স্রষ্টার?
না প্রেমিক হলাম, না নীরব দর্শক
আমি শুধুই এক বৃষ্টিভেজা পথিক
পথই আমার জীবন, পথের প্রান্তই গন্তব্য।


ক্ষণিকের সাথি

ক্ষণিকের সাথি হয়েছ তুমি দাওনি সুখের ভাগ
তবু তোমার প্রতি রইবে আমার চির অনুরাগ
দেখে তোমায় হয়েছি ব্যাকুল মুছেনি দুখের দাগ
প্রীতি চেয়েছি স্মৃতি পেয়েছি খুঁজিনি কুসুমবাগ।


কাছে এসেছি পাশে বসেছি চলেছি কিছু পথ
মনের সুবাস হয়নি প্রকাশ করেছি পারাবাত
বন্ধনে চেয়েছি ক্রন্দনে পেয়েছি পেরিয়েছি মরুপথ
আমায় একেলা কেনো অবহেলা চাইনি কৈফিয়ত।


তোমার প্রতি নেই আরতি ওগো অতি বিস্ময়
তুমি মোর স্বপনের বঁধু কামনার কাম্য নয়
প্রাণের তিথি ধ্যান সারথি, হে সতত হিরণ¥য়
তোমার কাছে চাই যে শুধু সখ্য চিরাক্ষয়।


কোন্ অপরাধ কী অপবাদ রেখেছ আমার তরে
দিয়ে দাও যাহাই প্রাপ্য রেখো না গোপন করে
তোমার আনন অতুল কানন রাখব মনের অন্দরে
তোমার স্মরণ জীবন মরণ থাকবে জীবন কন্দরে।


বসন্ত অবধি থেকো

বর্ষা এসেছে বলে বৃষ্টি এলো
জল পড়লো, জীবন নড়লো
কদমফুলের রূপে সে এলো
চোখ কাঁপলো, হৃদয় হাসলো।


আনন্দের বর্ষণে হবে অবগাহন
শ্রাবণের গান ভেতরে-বাহিরে
বর্ষণমুখর নির্জনে হবে নেত্রমিলন
হৃদয় রাঙাবো রংধনু আবীরে।


কাশফুল তুলিতে শুভ্র শারদ আকাশে
অবিরাম এঁকে যাবো সুকোমল চিবুক
বক্ষাবরণ ওড়ে যাবে বেয়াড়া বাতাসে
কবি খুঁজবে তখন কবিতার ডাহুক।


কবিতার ফসল নাও তুলে দু’হাত ভরে
আবৃত্তি শোনাবে হেমন্তে নবান্নোৎসবে
শীতের রাতে নাগরিক উষ্ণাঞ্চল জুড়ে
অধিকার ও আধিপত্য কবির অনুভবে।


উদাস করা দুপুরে সৌখিন সমীরণে
যেন প্রজাপতি মন ওড়ে যায় অবিরত
গানের ফাগুন আসে দক্ষিণ বাতায়নে
সেই বসন্ত অবধি পাশে র’বে তো।


মন বাড়িয়ে দিলেম

বুকের কথা মুখেই রেখে
মন বাড়িয়ে দিলেম, পরী
হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারি
তবু দৃষ্টি দিয়ে আঁকড়ে ধরি।


অনুভবের কোন্ কার্নিশে
জাগায় তোমার শিহরণ
তুমি কি বুঝতে পারো
আমার আঁখির বিচরণ।


চাইলে তুমি জিগরখানি
তুলে দেবো তোমার হাতে
ডুব সাঁতারে মুগ্ধ হবো
মৃণাল দেহের জলপ্রপাতে।


সুখ শ্রাবণের বৃষ্টি হয়ে
ভিজিয়ে দাও হৃদয়পুর
বিজলি মেয়ে মিষ্টি হেসে
যেও না চলে অচিন্ দূর।


সুনয়নার চোখ

এই আমি, এখনো কলেজ রোড হয়ে
তোমার প্রিয় ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে
কোনো কোনো প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে
ফিরে আসি সন্ধানী চোখে অস্থায়ী গন্তব্যে,
যে পথ দিয়ে এখনো তুমি যাও আসো
নিষ্প্রাণ পথ ও পথিক উল্লসিত হয়
তোমার মৃদুমন্দ অথচ উচ্ছ্বল পদচারণায়।
কিন্তু আমার স্মৃতিগুলো যে আজ
কালো পিচঢালা পথ হয়ে গেছে নীরবে,
এত আসি-যাই-ঘুরে বেড়াই নিষ্পলকে
চকবাজার, গণিবেকারি, কাতালগঞ্জ,
কাপাসগোলা, প্যারেড কর্ণার, চন্দনপুরা
কিন্তু তোমাকে দেখি না কাকতালীয়।


অনেক চোখে চোখ রাখি অজান্তে
হায়! সুনয়নার চোখদ্বয় চোখে পড়ে না।


অতঃপর অর্ধেক দেখা

যখন তুমি গ্রীবা বাঁকিয়ে পদ্মার বাঁকের মতো
দেখছিলে আসমানের জমিন আশপাশ
তোমার বাম কপোলের কালো তিলক
হরিণ চক্ষুর ন্যায় আমাকে আচমকা
চোখ মারলো, হৃদপিন্ড কেঁপে কেঁপে
এঁকে নিলো তোমার তীব্র সুত্বকা
কপোলের বাম দিক, স্লিম নাকের ধারালো রেখা
তবে কি হৃদয়ের অপর পৃষ্ঠায় ক্রমশঃ
আরেকটি মুখ জলচিত্র হয়ে ওঠছে
কাইয়ুম চৌধুরীর তুলির আবোল তাবোল আঁচড়ে।


কিন্তু ভুল হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত
জলরঙের আভাস উদ্ভাসিত করতে
তোমার চোখের অন্ততঃ অর্ধেকাক্ষি
অথচ তোমার কাছের অতি পেছনেই
উন্মোচিত দৃষ্টিদ্বয়। অতঃপর মন ধাঁধিয়ে
চোখে পড়লো অমাবশ্যারঙা টিপ
ভ্রুযুগলের ঠিক মাঝখানটায়।


তাও অর্ধেক। শেষ হলো না অর্ধেক দেখা
জীবন্ত নদীর, কর্ণফুলীর বাঁক নেয়ার মতো
একবার ফিরে তাকিয়ে অচেনা পথে
হারিয়ে গেলে অজানার মহাসমুদ্রে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের উৎসবে
আমি রয়ে গেলাম কবিতার প্রেমে।


বালিকার মুখ

তখনো আমার স্বপ্ন দেখার বয়স হয়নি
তখনো আমি মাঠে-ঘাটে অবাধে
ছোটাছুটি করা দুরন্ত বালক।


তখনো বাবা-মায়ের চোখ লুকিয়ে
লাল-নীল ঘুড়ি বানানোর নেশা
তখনো খেলাধুলা মানে এক্কাদোক্কা-কানামাছি
বন বাদাড়ে পাখি খোঁজার অবসর।


সেই ফুলকুঁড়ির মতো জীবনের শৈশব প্রান্তে
কৈশোর ছুঁই ছুঁই করা দুরন্ত বয়সে
আমার জলে ভাসা চোখের কার্নিশে
ধাক্কা লাগে তার জলছবি অবয়ব
শিউলি ঝরা ভোরের শুভ্রতা নিয়ে।


কিন্ত বালিকা ছিলো নির্ভেজাল অবুঝ
একেবারে সদ্য ফোটা পদ্মের মতো নির্মল,
তাকে অনুসরনকারী চোখগুলো অতঃপর
গ্রহ-গ্রহান্তর, বন-বনান্তর, পর্বত পেরিয়ে
তার চোখে, ও দু’টো যেন খোসা ছাড়ানো লিচু
আমি দেখেছি- তবুও সে উদাসীন অন্যদিকে।


গোলাপের পাপড়ির মতো ছিলো কপোলে
বালিকার মানাভিমানের উজ্জ্বল ছায়া
দুষ্টো চটুলতার বদলে চোখে-মুখে তার
ছিলো মায়াবী প্রীতির অনিঃশেষ আভা।


এরপর বহু বছর পর এখনো বালিকার মুখ
উঁকি মারে হঠাৎ মরচে পড়া মন বাতায়নে
মেঘভরা আকাশে দ্বাদশী চাঁদের মতো।
পৃথিবীর পথে পথে হেঁটে যাওয়া কোনো
বালিকাকাল পেরুনো তরুণীর মাঝে
তার জোস্না ধোয়া মুখ খুঁজি মনের টানে
খুঁজবো অনন্তকাল ধরে পথে-প্রান্তরে নিরন্তর
এ অন্তহীন আশায়, যদি পেয়ে যাই তারে
‘শিকারি চাঁদ’ জাগা কোনো জ্বলজ্বলে রাতে
মরুভূমির মাঝে সবুজ গালিচার উদ্যানে।


আমি সুসময়ের অপেক্ষায়
সেই বালিকার প্রতীক্ষায়।


বিপ্রতীপ ভাবনা

উপেক্ষিত জীবনে আক্ষেপের অপেক্ষা মরীচিকাময়
স্বাপ্নিক সময়ের সোনামুখ স্মৃতির সভায় কী বাঙময়
কাউকে ওঠানো আর হটানো প্রয়োজনের কারসাজি
মানবিকতা ও ভালোবাসা মাকালের সৌন্দর্যেই রাজি।


কেউ কি জানে সময়ের উল্টো পিঠে কীসের উত্তাপ
জয়ধ্বনী উল্লাস নাকি কোনো বরাভয় ছড়ানো প্রতাপ
যদি জানা যেতো সময়ের স্পর্শহীন সম্ভাবনার কথা
জলে স্থলে মনে মনান্তরে তারই অনুসরন যথা তথা।


মেনে নিতে হয় অতীত, মানিয়ে চলা অপ্রস্তুত বর্তমান
ভবিষ্যত কার অপেক্ষায় ভবিতব্যই সহজাত সমাধান।

নদী ও দু’তীর

নদী, তুমি আমাকে ভাঙতে পারো
তবুু নিঃশেষ করতে পারবে না কভু
আমার ক্ষয় আছে কিন্তু লয় নেই
অন্তত যতদিন তুমি বেঁচে র’বে।


ক্ষয়িষ্ণু শরীরে আমার অতীত নেই,
কিন্তু তোমার বহমান বর্তমানের সাথে
আমার ভাঙ্গাগড়া বর্তমান নির্জলা সত্য।
আমার বাহুবন্ধনেই তোমার অতীত-
বর্তমান, এমন কি ভবিষ্যতও।


তোমার দেহের প্রতি বাধহীন বাঁকেই
খুঁজে পাবে আমার অন্তরঙ্গ স্পর্শ।
তোমার উত্তাল দেহের সুখময় ঢেউ
বুকে আমার আঘাত করে ছলাৎ ছলাৎ।
তোমার বুক ভাসানো চোখের জলে
কাদামাটি হয়ে ক্ষয়ে যাই প্রতিনিয়ত।
অবশেষে যেদিন তোমার বুকে কষ্ট কষ্ট
পলিমাটি জমবে নদী, সেদিন আবার
আমার জীবনে বালুচরের হাহাকার।
যেহেতু তুমি স্রোতস্বিনী আর আমি দু’তীর
আমাদের সম্পর্ক প্রীতির নাকি স্মৃতির?


নির্ভরতা

আমি কিসের নির্ভরতায়
তুলে দেবো তোমার হাতে ফসল,
আমার সাধনার ফলাফল।
তুমি তো মাঠে দোলা দেয়া
উত্তুরে বাতাস মাত্র, খানিক্ষণ
দাঁড়িয়েছ রৌদ্রছায়ার অবসরে।
মন বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখার আগেই
হঠাৎ চলে যেতে পারো
অন্য গৃহস্থের বাতায়নে।
চলে যেতে চাইলে ধরে রাখার
কোনো কৌশল আমার জানা নেই,
সেই অভিজ্ঞতাও নেই এ জীবনে।
শুধু তোমার চলে যাওয়ার অদৃশ্য পথ ধরে
উদাস চেয়ে থাকাই শেষ পরিণতি।
তোমার চুড়ির শব্দে যদি
ঘুম না ভাঙে সুহাসিনী প্রভা, তবে
কীসের আহ্বানে মাঠে যাবো,
কার জন্যে ফসল ফলাবো?
তোমার নির্ভরতার হাতছানি
আমার স্বপ্ন ও ভালোবাসা।


তুমি এলেই যখন চলে যেও না অকালে
খুঁজে নিতে চাই তোমার মাঝে
আমার জীবনের নির্ভুল সফলতা।
জীবনের সবকিছুতে তোমারই ছায়া
এই হোক আমার একমাত্র নির্ভরতা।  



একটি কথা বলাই হলো না

একটি কথা বলাই হলো না
সে কথাটি বলবো বলে চোখে-মুখে
কথার পিঠে কত কথা বলি তারে
শুধু একটি কথা হয় না কভু বলা।


হাজার কথার ভীড়ের মাঝে
সে কথাটি হারিয়ে গেলো মনে মনে
কথায় কথায় কত সময় ফুরিয়ে গেলো
বলার কথা বলাই হলো না।


ভূমিকার ভাব শেষ না হতে
প্রসঙ্গটা পাল্টে গেলো অজান্তে
শহর-নগর, অলি-গলি পেরিয়ে দেখি
আসল কথাই রয়ে গেলো কথার বাইরে।


কতো কথা পাখি হয়ে ওড়ে আকাশে
শুধু একটি কথা ঝরা পালক
সময় শেষে রইলো পড়ে হৃদয় জমিনে।


সেই কথাটি ঘড়ির কাঁটায়
বিরতিহীন ঘুরে বেড়ায়
শোনার মানুষ হারিয়ে গেলো অন্যজনায়
তাই বলবো বলে বলাই হলো না।
একটি কথা
এখন ব্যথা
মনের কথা
বলি কোথা
হাজার কথা বলা হবে এ জীবনে
একটি কথা আর কখনো বলা হবে না
একটি কথা বলাই হলো না
ভালোবাসি তোমাকে, ভালোবাসি শুধু...।


হে বৃষ্টি বিলাসী মন

মনে আছে, একবার বৃষ্টি নেমেছিলো পথিমধ্যে...
‘ওই যে বললাম ফিস ফিস করে বলতে’, তুমি বললে।
তাহলে মুখটা বাড়িয়ে দাও আমার মুখের কাছে।
কেন মনে নেই বুঝি হঠাৎ বৃষ্টির কথা।
এবার বললে, ‘কানে কানে বলবে?’
তবে হাতে রাখো হাত, কাঁধেতে কাঁধ।
‘তারপর?’ তুমি শুনতে চাইলে দরদ ঢেলে।


তুমি আমি গিয়েছিলুম অরণ্যাভিযানে
পাহাড় পেরিয়ে সবুজ মাঠের ধারে বয়ে চলা নদীর কিনারে,
অরণ্য খুঁজতে খুঁজতে হন্যে হয়ে পেলাম
মুখোমুখি বসবার ক্লান্ত অবসর।
কী যেনো কী ভাবতে ভাবতে
তোমার চাহনি নিয়ে গেলো গভীর নিস্তরঙ্গ নদীর জলে।
এলোকেশে হারিয়ে যাওয়া অরণ্যের ছোঁয়া সুগন্ধি বহতায়।
নিঃসীম তোমার বুকের অতলে নির্ভাবনায় হৃদয় গেঁথে দিলুম।
আহা! সে কী শান্তির সান্ত¡না, অনুভবে নিদাঘ আল্পনা।


অরণ্য দেখার সাধ আর র’লো না,
তোমাতে অরণ্য খুঁজে নদীর কাছে রেখে এলুম যৌবন ঋণ।
না, এ নয় অরণ্যে রোদন।
এ শুধু অরণ্যচারিণীর আরণ্যক উদ্ভাসন।
বৃষ্টিতে ভিজে কাদায় পা ডুবিয়ে স্থির ভালোবাসায় অস্থির দু’জন।
এ বৃষ্টির গল্প একজীবনে শেষ হবার নয়,
তুমি যে অশেষ সুখে বেঁধেছো আমায়, হে বৃষ্টি বিলাসী মন।


অতঃপর, তুমি ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলে ঘুমের অরণ্যে।
এদিকে আমি, তোমাকে তো ভাবছি, আর মনে মনে আঁকছি।

অনাকাঙ্ক্ষিত পথিক

বজ্রাহত শ্রবণযন্ত্রে শুনলাম যখন
শ্রাবণধারার মতো এ আকাশ চক্ষু
আর সিক্ত হৃদয় রিক্ত হলো তখন
মনের ক্ষত অনুভবে বড়ই সূক্ষ্ম।


তুমি প্রসন্ন মনে আমার বিষণœ ক্ষণে
তবে কি চাওয়া পাওয়া মুহূর্তেই শেষ
তোমার ভালোবাসা পালাচ্ছে প্রাণপণে
ধূলি ধূসরিত হচ্ছে বহুস্বপ্নের অবশেষ।


তোমার চলার পথে অনাকাঙ্খিত পথিক
প্রেম ও ঘৃণার মাঝে নিরবচ্ছিন্ন রৈখিক।


একজন

পুরোনো চোখ
নতুন মুখ
কেউ স্মৃতির
কেউ প্রীতির
ঘাস শিশির
আকাশ আবীর
মৌন দুখ্
তবুও সুখ
সব চেনা জন
হয়তো আপন
শুধু একজন
এখন স্বপন।


প্রত্যাশা ও প্রতীক্ষা

হারিয়ে গেছে সোনালি ডানার চিল
ফিরে পাবে না আশৈশব খাল-বিল
বদলেছে সময়, জীবনের নেই মিল
ফিরে আসে সে সব স্মৃতি অনাবিল।


কথা ছিলো আমাদের দখিন হাওয়া
শাদা বক, শুভ্র কাশফুল ছুঁয়ে যাওয়া
ফড়িং মনে অপরাহ্নের ক্লান্ত দাওয়া
সব হবে রাঙা কোনো ভোর পাওয়া।


সেই আলপথ খুঁজি জীবনের সবখানে
চন্দ্রমল্লিকা ফুটবে কি স্বপ্নের সিথানে?
আশারা চুরমার প্রতারণার প্রত্যাখানে
তবু প্রত্যাশা-প্রতীক্ষা প্রিয়সব সন্ধানে।


রজনী ও স্বজনী

আমি রজনীকে প্রশ্ন করি
রজনী আঁধারে চুপটি থাকে
আমি স্বজনীকে প্রশ্ন করি
স্বজনী অভিনয়ে লুকিয়ে রাখে।


হঠাৎ যদি তারকা ঝলসানো
চন্দ্রিমা কোলাহল ভরা রাতে
রজনীর সাথে উধাও হয় মৌন
স্বজনী অনন্যা অরুণ প্রাতে।


আমি কি শুধুই আমার একার
নাকি অন্য কারো, আমি যার।



ছেলেবেলার দিন-রাত্রি

পাতায় পাতায় রবির কিরণ
সে যে মুগ্ধ সকাল বেলা
ঘাসের ডগায় শিশির কণা
আমার শুদ্ধ ছেলেবেলা।


মধ্য পুকুর উথাল পাতাল
সেই সব তপ্ত দুপুর বেলা
ডুব সাঁতারে আনন্দিত মন
ভাসিয়ে কলার ভেলা।


শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে
কত একলা বিকেল বেলা
পাখির ডাকে উদাস মনে
নির্ভাবনার লুকোচুরি খেলা।


পাখির ঝাঁকে নীড়ে ফেরা
মিষ্টিরাঙা সাঁঝের বেলা
ঘুড়ির নাটাইয়ে অতৃপ্ত মন
ভেঙে যেতো খুশির মেলা।


উঠোন জুড়ে জোনাকিরা
ডেকে নিতো সন্ধ্যেবেলা
পিছন ফিরে মুচকি হেসে
ভুলিয়ে দিতো অবহেলা।


চাঁদের জলসায় গল্প বলা
জোস্নামাখা রাত্রিবেলা
তারার ভিড়ে উড়ে যেতো
মানস সুখের ভেলা।




কণ্ঠস্বর, আট বছর পর

ফেলে আসা দিন ফিরে আসে না, জানি
সঙ্গে থাকে শুধু স্মৃতির রং-তুলি।
কত কথা আর সুর আনমনে কানাকানি
হৃদয়ে যা বঙ্কিম তা কী করে ভুলি?


জোনাকি নিভে যাবে কখনো তা ভাবিনি
বলেনি, পাশাপাশি চলার দিনগুলি
স্মরণে আজ আবার প্রিয়মুখের ঝলসানি
ফিরতি যানে সময় তখন গোধূলি।


মুঠোফোনে হঠাৎ পাখির কলরব শুনি
যে কণ্ঠ ছিলো হাসিময় তীক্ষè ছুরি
ওপার হতে কী অবিশ্বাস্য নিস্তরঙ্গ ধ্বনি
আট বছর পর কণ্ঠস্বরে অন্তপুরী।


স্বপ্ন বিভোর মনে ধ্রুবতারা কে না গুণি
স্মৃতিতে ভাসে জীবনের খেয়াতরী
বলো না কখনো বিদায়, বন্ধু অভিমানী
পথ চলি চলো, সময়ের হাত ধরি।


প্রিয় অতীত, প্রিয় ভালোবাসা

অনেক রজনী পেরিয়ে এলো সুন্দর ভোর
অনেক সিঁড়ি পেরিয়ে এক চিলতে করিডোর
কার অন্বেষায় আজ এখানে
কী খুঁজি, কারে খুঁজি সবখানে
বন্ধু তোমাদের, শুধু তোমাদের।


কার কাছে রেখেছিলাম মোর হৃদয়
কার মুখ এঁকেছিলাম মোর হৃদয়ে
সে কি এখানে আজ এসেছে সলাজ
দেখবো কি তার দেহ কারুকাজ?


কোথায় সেই হারানো মুখ
কোথা হারালো সোনাঝরা দিন
আজ শুধু উদাস চোখে চেয়ে থাকা।


আজ এই গোধূলি লগনে
কারে মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে
নরম মেঘের শুভ্রতা শারদ গগনে
কার মুখ উঁকি মারে মনে মনে।
প্রিয় অতীত, প্রিয় ভালোবাসা
প্রিয়মুখ, প্রিয় সব আশা।


বন্ধুর জন্য

বন্ধু, দূরে যেওনা
বন্ধু, ভুলে যেওনা।


চিরদিন মনে রেখে
হৃদয়ের কাছে থেকে
চলো জীবনের গান গাই
সামনে এসে হাত বাড়াই।


যেটুকু কাছে থাকো বন্ধু
     বলো ভলোবাসি
যত দূরে যাও হে বন্ধু
     বলো ভালো আছি।


ঘাসফুল বেদনা
তবু এই কামনা
আবার দেখা হতে পারে
হারানো সেই পথের ধারে
অবশেষে এই প্রত্যাশায়
অন্তরে প্রান্তরে জীবন সাজাই
বন্ধু, বিদায়... বিদায়।


এইতো জীবন

এলোমেলো মন
কারে খোঁজে অনুক্ষণ
আসে না ঘুম
রাত নিঝুম।


চোখের তারায় কী ছবি ভাসে
খুঁজে ফিরি মনের চারিপাশে
মন শুধু
মরু ধূধূ
বেদনার ঝড়
কাঁপে অন্তর
বিরহের বীণ
বাজে অন্তহীন
সে কেন রয় দূর পরবাসে
প্রাণ বাঁচে স্বপ্নে তবু আসে।


এইতো জীবন
কখনো ছুটে চলে
কখনো থমকে দাঁড়ায়,
স্বপ্ন আসে
স্বপ্ন ভাঙে
সময় বয়ে যায়।
চেনা মুখ ধূসর হয়
তবু ভালো থাকার অভিনয়।



ছিন্নপদ্য

১.
জলের সাথে জলের আলিঙ্গন
বাতাসে বাতাসে একমুখো সঙ্গম
আর আমি বৃক্ষের বাকলে ফোটা
পাপড়ি জোড়ার স্বপ্নে বিভোর।
এসো মেতে ওঠি প্রাণের মেলায়
হলুদ রাঙা ফাগুনের উৎসবী ছোঁয়ায়।


২.
এই আমি অতি নগণ্য
মনটা তবু অগ্রগণ্য
    সত্যের জন্য
    মৃত্যুও ধন্য
অন্ধকারের এ অরণ্য
মুক্তির পথ অত্যাসন্ন।


৩.
প্রিয় বন্ধু মোদের বধূ সেজে যায়
নাম না জানা কোন্ সে সুদূর গাঁয়।
ঝমঝম নূপুরের সকরুণ ধ্বনি
রিনিঝিনি কাকনের ক্রন্দন শুনি।  


৪.
যখন দাউদাউ পোস্টারে জ্বলে আগুন
দাবানল হয়ে ওঠে দৃশ্যমান ফাগুন
চোখের জমিন হয় সংগ্রামী ফেস্টুন
প্রতিটি বজ্রমুষ্টি একেকটি গ্রেনেড কার্টুন
আমি তখন কী করে থাকি দর্শক নিপুণ।


৫.
যৌবনা নদীর বুকে এখন উত্তাল ঢেউ
এ ঢেউতে ভাসবে কিন্তু কেউ না কেউ
উপক’লীয় অঞ্চল জোতদারের দখলে
ঐ দূর দিগন্তে মিশে গেছে ভাগ্যরেখা
তীরভাঙ্গা বাসিন্দার শুধুই কি অপেক্ষা
কখন চর জাগবে, কখন ঘর বাঁধবে?


৬.
সেই সে প্রথম দিনের স্মৃতি
আজো যেন পূর্ণ চাঁদের তিথি
সেই প্রথম দিনের মৃদু আলাপন
শিশির ভেজা পদ্ম পাতার কাঁপন।


৭.
পাথর ভাঙার গান শুনেছি আমি
জীবন গড়ার গান গেয়েছি আমি
তবু পাইনি খুঁজে জীবনের খৈ
প্রতিক্ষণ করে যাই শুধু হৈচৈ।


৮.
স্বাধীনতার তেত্রিশ বছর অতিবাহিত
তবু পেলাম না স্বাধীনতার সুফল
হৃদয়ে আঁকা কোন্ জলচিত্রটি হরিৎ
নজরকাড়া মৌনতায় এত উজ্জ্বল।


৯.
প্রীতির আয়নায়
স্মৃতি দেখা আর
তিথির আলোয়
গীতি লেখা ভার।


১০.
রাতে এসে রাতেই চলে যেও
আমি ছাড়া জানবে না আর কেউ
তুমি-আমি দু’জন মিলে
ভিজতে যাবো মতিঝিলে
এসো তুমি এসো
ভালো যদি বেসো
আমি র’বো অপেক্ষায়
রাতের খোলা দরোজায়।


১১.
যে পথে ভাই-বন্ধু-প্রিয়জন
খুঁজে ফিরি মনের মহাজন।


হৃদয় খোঁজে প্রাণের অভ্যূদয়
জানি সে তো সময়েরই সঞ্চয়।


কে কোথায় আজ? কেউ কারও নয়
এ বুঝি ক্ষণিক সাথি, পথের পরিচয়।


১২.
নদীর দেশে এ কোন নদী,
বয়ে চলে নিরবধি, ও নদী।
জলে তাহার ছায়া পড়ে,
লগির টানে উঠে নড়ে।
সুন্দর এ টলটলে জলের ছবি,
তার চেয়ে মায়াবী ছবির কবি।


১৩.
সেই দিনগুলো আর ফিরিবার নয়...
শুধুই স্মৃতিময়...
সময় উল্টে গেলে কী না হয়...
হৃদয়ের কোণ হতে উঁকি মারে সোনালি সময়...


সবুজ ঘাসে শিশির বিন্দু

আমি তো চিরদিন পথের পথিক সবুজ ঘাস
তুমি মুক্তার মতো ঝকঝকে শিশির বিন্দু
আমার জন্য প্রস্তুত আমৃত্যু বিষাদ সিন্ধু  
তোমার জন্যে অট্টালিকায় সৌখিন অবকাশ।


তুমি যে আজ অরুণ তাপে করুণ পরাজিত
বাষ্প হয়ে হারিয়ে যাবে কবে অবশেষে
সাত-সমুদ্র তের নদী পাড়ি দেয়া দেশে
তবু বলি- অতীত ভেবে হয়ো না কভু ব্যথিত।


দু’চোখে আমার বেঁচে থাকার স্বপ্ন টলোমলো
তোমার ছোঁয়ায় সিক্ত হৃদয় হঠাৎ রিক্ত এখন
মনের মেঘে বৃষ্টি ঝরে একাকী এ শ্রাবণ লগন
তবু পুষ্পধামে রৌদ্র সুখের উঠুক ঝলোমলো।


এমন দু’জনে

দিনের ওপারে রাত
রাতের এপারে দিন
এপার-ওপার দিন-রাত
সময় বহে বিরতিহীন।


পত্র-পল্লবে এমন দু’জনে
আশা-নিরাশার কুজনে।

রাখিও, শূন্য আশায়

স্মৃতির পালে লাগলে হাওয়া
মনে পড়ে প্রথম চাওয়া
ভালোবাসা নাই বা হলো
সময় ¯্রােতে বয়ে চলো।


দেখা হলে চেনা চোখে
একটুখানি চেয়ে দেখে
সময় পেলে কাছে এসে
কিছু সময় পাশে বসে
বলে যেও, আছো কেমন
মনে পড়ে, আজো তেমন?


সুযোগ যদি নাই থাকে
হাত নেড়ে দূর থেকে
জানিও, চেনো আমায়
রাখিও, শূন্য আশায়।

শ্রাবণের সন্ধা

ভেজা চুল, ভেজা মুখ
ভেজা ভেজা স্মৃতি
জোছনার আলো ছায়া
শিউলি মালার আরতি।


তোমার অপেক্ষায় থেকে
কয়েক পঙক্তি পদ্য লেখা
বৃষ্টি হয়ে ছুঁয়ে গেলে
না হোক মুখোমুখি দেখা।


সন্ধা রাতের বাদলে
আগল খোলা মননে
একি রোদন জাগালে
শ্রাবণ ঝরা গগনে।

অনুবার্তা

সুখী...
ঘুমাও তুমি
নির্ঘুম আমি
দুঃখী...


রাতের প্রহর গুণে কাটে সময়,
তবু ভালো থাকার করি অভিনয়।
মনটা কেমন খালি খালি,
পাওয়া না পাওয়ার জোড়া-তালি।
কেমন করে বলি তারে,
যে আমারে বুঝলো নারে।


আকাশের তারা গুণি নয়নে নয়নে,
বাতাসে ব্যথা বুনি গোপনে গোপনে।
অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকি একা,
কে আমাকে ফিরিয়ে দেবে জোছনা রাতের রেখা।


যায় কেটে যায় রাতের প্রহর
ঘুমিয়ে পড়ে শহর নগর
যার চোখে আজ নেইকো ঘুম
কষ্টে কাটে রাত নিঝুম।


জীবন জুড়ে যার শুভের আকাল
কী দরকার তার শুভ সকাল
যার রাত গেলো সুখ স্বপ্নে
সকালটুকু যাচ্ছে শুভ কর্মে
দুপুর বিকাল যাবে ভালোয়
সন্ধ্যা রাঙবে গোধূলি আলোয়
দিন শেষে রাত হবে প্রভাত
জীবন হোক তার সুখের প্রপাত।


কী আসে-যায়

একদিন গোধূলি বেলায়
সেই রঙ ছড়ানো খেলায়
এসেছিল সে মনের মেলায়
কেন ভুলে যাই অবহেলায়।
হায়! তাতে কী আসে-যায়...


একি শুনি মর্মর ধ্বনি
স্মৃতির তারে রিনিঝিনি
চিরদিন তারে আমি চিনি
মর্মে দেখি চোখের মণি।


আহা! সে মনের জানালায়
বারে বারে উঁকি দিয়ে যায়।
হায়! তাতে কী আসে-যায়...

এক জীবনে কত বন্ধু

এক জীবনে কত বন্ধু, ভালোবাসা
প্রিয়মুখ সময়ের বাঁকে ফেলে আসা
তবু মনে পড়ে থমকে থাকা সময়ে
জেগে থাকে অনুরাগ বুকের বলয়ে।


হয় না কথা, বহুদিন নেই কারো দেখা
অম্লান অনুভুতিতে তবু স্মৃতির রেখা
আসা-যাওয়া এ জীবনের পথে-প্রান্তরে
সময়ের সব বন্ধু থাকুক অনন্ত অন্তরে।


ভালো থেকো বন্ধু, প্রতিদিন প্রতিক্ষণ
বন্ধু দিবসে এ কবিতায় করছি স্মরণ।


দ্বাদশী-১

এ জীবন নিত্য নতুন জয় পরাজয়
কত ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয়
প্রিয় কিছু হারানোই শেষ কথা নয়
নতুন কিছু পাওয়া মানে নতুন ভয়।


অতীত ভাবনা অনর্থক শুধুই বৃথা
ভবিষ্যতটাই সময়ের আসল কথা
বর্তমানকে সঙ্গে নিয়ে সুখের টানে
এগিয়ে যাও জীবনের সম্মুখ পানে।


মর্ম বেদনার সব স্মৃতি মুছে ফেলে
সময়ের সাথে যাওরে হেসে খেলে
জীবনের সব জীর্ণ ভুল যাও ভুলে
মনটাকে রাঙিয়ে নাও নতুন ফুলে।

অষ্টপদী-১

প্রাণখোলা হাসিতে
যে জীবন বইছে উচ্ছ্বল,
সুর তোলা বাঁশিতে
তরঙ্গায়িত মুগ্ধ বিহ্বল।


আঁখি দিয়ে মন ছুঁয়ে
জীবনকে ভালোবাসিতে,
জয় পরাজয় ঘুচিয়ে
দুঃখ মুছি সেই হাসিতে।


অষ্টপদী-২

দলবেঁধে আজ খুঁজবো চলো সেই সে অতল
গভীর গাহনে চুপিসারে হয়তো হবে মন বদল
সেই অজানা সুখের আবেশে আজও বিহ্বল
বিমুগ্ধ বিশ্বাসে মোহিত ফুটোন্মুখ সুপ্ত শতদল।


কেন যে হারিয়ে যেতে হয় অচেনা কর্কশ পথে
মন চায় চুপিসারে চেনা পথে লগন রেখে যেতে
খুঁজে ফেরে হারানো সুরাসুর পথে যেতে যেতে
চেনামুখ চেনাসুর মিলিয়ে যায় কোন্ সুদূর রথে।


অষ্টপদী-৩

যদি ভালোবাসা না থাকে ঐ মননে
তবে কেন পাবে আমার মন,
যদি এতো লুকোচুরি অভিনয় নয়নে
তবে কী করে সে হবে স্বজন।


একদিন মন উড়ে যাবে নিঃসীম মেঘে
পাবে না পাবে না খুঁজে রাত জেগে,
একমুঠো নিস্তব্ধতা মন-মন্দিরে রেখে
প্রভাত আলো খোঁজো কী আবেগে।

অষ্টপদী-৪

আমি এখনও নিঃশব্দে করি অনুসরণ
যদিও ছায়াসঙ্গীর হৃদয়ে হয় না অনুরণন,
ঘাঁস নয়, নয় ভেজা মাটি এখানে বিছানো
ভালোবাসা সিক্ত হৃদয় উঠোন নিকানো।


ছায়াসঙ্গী তোমার মতো মায়াবী হলে
স্মৃতিমাখা মন কাব্যছোঁয়া কথা বলে
মাঝে মাঝে এসো একটু মায়ার ছলে
সুখের সৌখিনতা বহুক মৌন শতদলে।



চতুর্পদী কবিতামালা

চতুর্পদী-১


কিছু কিছু ভুল থাকে মেনে নিতে হয়
জমিয়ে রাখলে তা মনে আনে সংশয়
অভিযোগ থাকলে তা লুকিয়ে রেখে
বিরহ বাড়বে আরো কত সত্যি দেখে।

চতুর্পদী-২


এ পথ যে আমায় ডাকে
পথের আলতো বাঁকে
চলন্তিকা পথিক কাকে
ভালোবেসে মনে আঁকে।

চতুর্পদী-৩


মুগ্ধ হয়ে দেখি তার ললিত হাসি
কি জানি কী এমন ভালোবাসি
বারেবার কেনো যে ফিরে আসি
চোখে পল্লবিত কোন্ স্বপ্ন রাশি।

চতুর্পদী-৪


নিঃশব্দ সেইসব রাত
নীরব জল প্রপাত
এলো সোনালি প্রভাত
দাঁড়াও, বাড়াও দু’হাত।

চতুর্পদী-৫


যদি পাখি উড়ে যায়
বিমুগ্ধ রবো ঐ শূন্যতায়
যদি পাতা ঝরে যায়
বিযুক্ত হবো নৈশব্দতায়।

চতুর্পদী-৬


দিনগুলো সব দুর্বোধ্য, ধোঁয়াটে ও ধূসর
জীবনের বর্ণমালায় নেই সুখের অনুস্বর
ছন্দহীন বাক্যে মাত্রা খুঁজে ক্লান্ত নিরন্তর
রিক্ত যাযাবর যাপনে অন্তমিল কালান্তর।

চতুর্পদী-৭


তুমি ডুব দিয়েছো ভয়
চুপ করেছে উজান সময়
ডুবটি যদি চুপটি রয়
জীবন কি শুধু অভিনয়?

চতুর্পদী-৮


মন আমার বড়ই উচাটন
মানতে পারে না অযতন
তবু মেনে নিতে হয় যখন
কী যে ব্যথাতুর সারাক্ষণ।



চতুর্পদী-৯


রুক্ষ দিনের দুঃখ ভুলে
ভিড়লো নৌকা নদীর কূলে।
সূক্ষ্ম স্মৃতি মূখ্য হলো
মনরে বোঝাই অতীত ভুলো।

চতুর্পদী-১০


ধরায় কেন ফাগুন আসে, কেন আগুন লাগে মনে
জোয়ার-ভাটার জীবন গাঙে, কেউ ভাসে উজানে
কৃষ্ণচূড়ার বাঁধন ছিঁড়ে কেউ কি যাবে পলাশ বনে
বসন্ত বায় কে ওড়াবে হলদে আঁচল অতল টানে।

চতুর্পদী-১১


দীর্ঘ এক দশক পর আজ আমি মুক্ত উৎসাহিত,
এ নতুন সময় সোনালি আভায় হোক উদ্ভাসিত।
ভালো থেকো প্রাণবন্ত ফেলে আসা প্রিয় অতীত
তোমার পানে চেয়ে রই ভালোবাসা অপরাজিত।

চতুর্পদী-১২


জানি, আমাদের কারো প্রতীক্ষাই
এক জীবনে ফুরোবার নয়।
তবু অপেক্ষা আর প্রতীক্ষার ঘোরপ্যাঁচে
খুঁজে ফিরি জীবনের জয়-পরাজয়।



চতুর্পদী-১৩


একসঙ্গে ছিলাম বিগত নবান্নে
প্রিয়, এবার কি আসবে তুমি?
বকুল তলায় এসো এ নবান্নে
জেনো, অপেক্ষায় র’বো আমি।

চতুর্পদী-১৪


কেন যে হারিয়ে গেলাম অচেনা পথে
মন যে চায় চেনা পথে ফিরে যেতে
খুঁজে ফিরি হারানো সুর পথে যেতে যেতে
চেনামুখ চেনা সুর মিলিয়ে গেলো কোন সুদূর?

চতুর্পদী-১৫


হাত বাড়িয়ে ফুল দেবে ফুল
জড়িয়ে নেবে মনের উপকূল
সে উঠবে নেচে দোদুল দুল
প্রাণের ঘ্রাণে হবে যে মশগুল।

চতুর্পদী-১৬


ছিলো এক পরিচিতজন
কিছুটা মনের মতন
নেই এখন কাছাকাছি
মনে রাখি মিছামিছি।

No comments:

Post a Comment