Monday, August 19, 2013

মৃন্ময় মিজান ফেইসবুক স্টেটাস

একটি আবৃত্তি সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে নিয়মিতই নতুন নতুন ছেলে মেয়ের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। তাদের অনেকের সাথে আমার বেশ ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। অনেকেই তাদের বাসায় আমাদের সংগঠন সম্পর্কে,আমার সম্পর্কে জানায়।

মাঝে মাঝে কারো কারো বাবা-মা আমাকে ফোন করে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে। একবার একজন বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসা এবং থাকার ব্যাপারে আমি এবং আমাদের সংগঠন বেশ যত্নের সাথে কিছুদিন কাজ করেছিলাম। তার বাবা আমাকে ফোন করে বলেছিল, বাবা হিসেবে তার যেটা করার কথা ছিল সে কাজটা আমি করেছি। আমাকে, আমাদের সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান। কিছুদিন পর সেই সদস্য একটা মারাত্মক ভুলের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেয়। আমরা তাকে, তার ফ্যামিলিকে সে ব্যাপারে সাবধান করলেও তারা আর আমাদেরকে তাদের হিতাকাংখী মনে করেননি। সেটা আদৌ ভুল কিনা সেটাও অবশ্য তদন্ত সাপেক্ষ।


একবার একজনের বাবা অনুযোগ করলেন, আমাদের কারণে তার সন্তানের পড়াশুনা নষ্ট হচ্ছে। আমরা যেন তাকে সংগঠনে আসতে নিষেধ করে দেই। আমরা নিষেধ করে দিলাম। কিন্তু তার পড়াশুনার কোন উন্নতি হল না। সে অন্য কারো সংগে, অন্য কোনখানে আড্ডায় সময় কাটাতেই লাগল। সংগ আমাদেরটা ভাল ছিল নাকি পরেরটা ভাল ছিল সেটা অবশ্য আপেক্ষিক।

আরেকজনের বাবা বেশ ধমক দিলেন আমাকে ফোনে। তার সন্তানের পড়াশুনা আমার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি বাবা হলে কি আমার সন্তানকে এভাবে বাইরে থাকতে দিতাম ? আমার জবাব ছিল-আমরা কাউকে বাধ্য করি না। কারো ভাল লাগলে আসে না লাগলে আসে না। ঠিক আছে আপনার যেহেতু পছন্দ নয় ওকে নিষেধ করে দিব। তিনি উত্তর দিলেন, না না তাকে এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না। শুধু টেকনিক্যাল্যি তাকে আসতে নিরুৎসাহিত করবেন।

আমার ছোট্ট এই সাংগঠিনক জীবনে একজনকে 'খুন হয়ে যাওয়া অথবা খুন করা'র পরিকল্পনা থেকে ফিরিয়েছিলাম, অন্তত পাঁচজনকে তীব্র মানসিক কষ্টের হাত থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছি। আর্থিক কষ্টে আছে এমন অনেক সদস্যের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। একটি সংগঠনের পরিচালককে তার কর্মীদের এ ধরনের সাপোর্ট দিতে হয়। তাদের বিপদে এগিয়ে আসতে হয়। অনেকে তার সমস্যা সম্পর্কে বলে না কিন্তু তার আচার আচরণ দেখে বুঝে নিতে হয়। সময় মত পদক্ষেপ নিতে হয়।

আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি যা বুঝেছি সেটা হল, তরুণ প্রজন্মের বখে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো- ভাল বন্ধুর অভাব। আরেকটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি সেটা হল, তারা এমন একজন অবিভাবক চায় যার কাছে সব বলা যায়, সব সমস্যায় পরামর্শ চাওয়া যায়। যে তরুণ-তরুণী বাবা-মার সাথে সব সমস্যা শেয়ার করতে পারে না, যাদের বাবা-মা তাদের বন্ধু নয়-তারা বাইরের বন্ধু এবং অবিভাবকের শরণাপন্ন হয়।

বলাই বাহুল্য, এই বন্ধুগণ বা অবিভাবকগণ সবক্ষেত্রে ভাল এবং চরিত্রবান হবেন এমন কোন গ্যারান্টি নাই।

https://www.facebook.com/mrinmoymizan/posts/616616325036287 

No comments:

Post a Comment