"এই তো জীবন। জীবন মানেই সংগঠন। সময়ের বাঁকে মন্দ এসে উঁকি না দিলে ভালোটুকু উপভোগ্য হয় না। তাই মন্দটুকুও হয়তো মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। আবৃত্তি একাডেমি কে ভালোবাসি, সবসময় নিজের চেয়ে সংগঠনের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করেছি। অতি নিয়ম-নীতি মানতে পারি না বলে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে, এটা স্বীকার্য। মাঝেমধ্যে ঐ 'কী পেলাম?' প্রশ্ন ইতিউতি করলেও ভালোবাসার চোখরাঙানি বেশিদূর এগুতে দেয়নি। কিছু মানুষের আত্মিকতা প্রত্যক্ষ করেই একযুগ পূর্বে এ সংগঠনে যুক্ত হই। সে মানুষদের এতটাই শ্রদ্ধা করি যে নিজের কোনো খারাপ লাগা থাকলেও চুপ থাকি। ঐ যে ভালোবাসা, সেখানেই আটকে গেছি। গুরুজনরা যখন ভুলভাবে প্ররোচিত হয় তখন আঁতে লাগে। মৃন্ময় মিজান ভাইয়া আপনি যদি বিব্রতবোধ করেন কোনো কারণে, সেখানে আমরা তো নস্যি।" ---জুয়েল আদীব।
------মৃন্ময় মিজান ভাইয়ের ফেসবুক স্টেটাস:
আবৃত্তি একাডেমি করে কি পেলাম!
অনেকেই প্রশ্ন করে ওখানে গেলে টাকা পাওয়া যায় কিনা! তাদেরকে বলি, টাকার জন্য ওখানে যাই না। পকেটের পয়সা খরচ করে কিছু ভাল সময় কাটানোর জন্য ওখানে যাই। কেউ পকেটের পয়সা খরচ করে সিনেমা দেখতে যায়, স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যায়, কেউ বারে যায়, আমি না হয় একাডেমিতেই গেলাম!
কিন্তু সবাই কি আমার মত পকেটের পয়সা খরচ করে কিছু ভাল সময় কাটানোর জন্য আসে? কারো ভেতরে কি অন্য কোন ধান্দা থাকে না? কেউ কি একাডেমীর টাকা মেরে দিয়ে একটু ভাল থাকার স্বপ্ন দেখে না? একাডেমী থেকে সুবিধা পেতে ব্যর্থ হলে কেউ কেউ কি একাডেমীতে আসা বন্ধ করে দেয় না? এসব প্রশ্নও যে শুনিনি এমন নয়। আমি বলেছি, কে কি জন্য আসে তা জেনে আমার কি কাজ! আমি শুধু জানি আমি কেন আসি। তখনি অবধারিত যে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি তা হলো- ধান্দাবাজরা আশেপাশে থাকলে ভাল সময় কাটাবেন কি করে?
এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আসলেই কি একাডেমীতে আমি শুধু ভাল সময় কাটিয়েছি? নোংরা রাজনীতি, ধান্দাবাজি, অর্বাচীনতা ইত্যাদির মুখোমুখি হইনি?
একটা সময় একাডেমীর মধ্যে ব্যাপক পড়াশুনোর সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাইকে বই পড়তে উৎসাহ দিতাম। যে চাইত তাকেই বই ধার দিতাম। যখন ধার দিয়ে দিয়ে এবং ফেরত না পেয়ে পেয়ে বইয়ের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এল সেই জজবা থেমে গেল।
একবার এক ছেলে অফিসে চলে এল তার কিছু টাকা লাগবে। মেসের ভাড়া দিতে পারছে না। টাকা নেয়ার পর থেকে সে লাপাত্তা। একজনকে বেশ ভাল একটা এমাউন্ট ধার দিলাম - সাত আট বছর পরও পুরো টাকাটা আজ অব্ধি ফেরত পেলাম না। একটা ট্যুরে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু ছেলে মেয়েকে টাকা ধার দিলাম- বছর দেড়েক পরও দুজন এখনো টাকা ফেরত দেয়নি। ওদের কাছে টাকা চাইব কি! ধার দেয়ার অপরাধে ওদের দেখলে নিজেই লজ্জা পাই- কেন টাকাটা দান করে দিলাম না।
মাঝে মাঝে বেশ উদ্ভট ঝামেলায় পড়ি। কোন একটা ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। আমি মত দিলাম। স্বভাবতই অযৌক্তিক কথা বলি না। ফলে অন্যরা আমার মতকে সমর্থন করে। দু একজন থাকে চোরের মত, কিছু বলে না। পেছনে সমালোচনা করে- আমি সবাইকে শিখিয়ে নিয়ে এসেছি। ব্যাপারটা যখন কানে এল, সমাধান দিলাম এভাবে- সবাই মত দেয়ার পরই আমি মত দিব। কিন্তু তাতেও ওদের মন ভরে না। ওরা যেমনটি চায় আমি তেমন মত না দিলেই ওদের মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ে। আসলে ওরা আমাকে সেই অথর্ব বুড়ো হিসেবে দেখতে চায়, যাকে সবাই মান্য করে কিন্তু যার নিজের কোন চিন্তা শক্তি নাই!
কিন্তু একাডেমিতে এত বেশি ভাল মানুষ আছে, এত বেশি ভাল সময় কাটিয়েছি সে সবের তুলনায় এসব খুবই নগণ্য। ভাল খারাপ নিয়েই পৃথিবী। আপনি কোন সংগঠনকে তখনি পুরোপুরি ভাল মানুষের সংগঠন বলতে পারবেন, যখন সেটা একেবারেই মানুষ শূন্য হয়ে যাবে!
No comments:
Post a Comment