Pages

Saturday, October 19, 2019

বিশ্বাসের সুতোয় স্বপ্নঘুড়ি

 


--------------

ভণিতা না করে সরাসরি প্রশ্ন, আপনার মন আছে? শুধু মন থাকলে হবে না, স্বাপ্নিক মন থাকা চাই এবং স্বপ্ন দেখার মানসিকতা চাই। স্বপ্ন দেখবেন, কোন স্বপ্ন? ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা বলছিনে। বলছি জেগে স্বপ্ন দেখার কথা, যা ঘুমোতে দেয় না। "যখন আমার ক্লান্ত চরন/অবিরত বুকে রক্তক্ষরণ/খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোণ/কী আর করে তখন/স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপ্ন/স্বপ্ন দেখে মন।" নচিকেতার এ গানটি মনে পড়ে গেলো। তবু স্বপ্ন দেখতে হবে আমাদের। কারণ মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হতে পারে। স্বপ্ন নিছক কল্পচিত্র নয়, বরং স্বপ্ন মানেই বাস্তব এবং স্বপ্নই ঠিক করে দেয় গন্তব্য। স্বপ্ন পূরণের পথে আহ্বান করতেই আমার এই স্বল্প পরিসরের শব্দজট।


আসুন, স্বপ্ন পূরণের পথে চলি সুপরিকল্পিতভাবে।

এর জন্য প্রয়োজন ইচ্ছা, আশা, প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা। এসবই মানব মনের মহাচালিকা শক্তি, বিনে পয়সায় অর্জন করা সম্ভব। প্রতিটি মানুষ তার আশা-প্রত্যাশার মতোই সুন্দর। যদি কেউ আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা-প্রত্যয়ের মৌন নক্ষত্রগুলোকে জ্বালিয়ে দিতে পারে, রাশি রাশি স্বপ্নালোকে ভরে উঠবে জীবন। এর পাশাপাশি থাকতে হবে মানসিক ধৈর্য ও অভীষ্ট লক্ষ্য। লক্ষ্য এমন স্বপ্ন যা বাস্তবরূপ লাভ করে। লক্ষ্যহীন প্রতিটি পদক্ষেপ চোরাবালির ফাঁদ। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেই ধৈর্যসহকারে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। পথের শেষ কোথায় সেই চিন্তা করা অর্থহীন, বরং সুচিন্তিত প্রথম পদক্ষেপই পৌঁছে দেবে সঠিক গন্তব্যে।


বাইবেলে আছে- He who liveth, he who beliveth, shall never die. (যে বিশ্বাস করে সে-ই বাঁচে)। প্রকৃত বিশ্বাস কাউকে ঠকায় না। বিশ্বাস আত্মতৃপ্তি বাড়িয়ে কর্মে অনুপ্রেরণা জোগায়। কাজের মাঝে আনন্দ খুঁজে পেতে স্বপ্নের প্রয়োজন। আর স্বপ্নকে যদি বিশ্বাসে রূপান্তরিত করা যায়, তাহলে তা অর্জন করা সহজ হয়ে যায়। 'বিশ্বাস পাহাড়কেও টলাতে পারে, এটা এক অদ্ভুত শক্তি।' অতীত কুহেলিকার মতোই, বর্তমান বিশ্বাসের অনুঘটক আর ভবিষ্যত সম্পূর্ণই স্বপ্ন। ভবিষ্যতকে যেমন আমরা ধারণা করতে পারি না, তেমনি পারি না অতীতকে বদলে দিতে। তবু্ও স্বপ্ন ও বিশ্বাসের সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে। কারণ মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড় হতে পারে, যদি তার সুপ্ত আশাকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারে। 


স্বপ্ন দেখানোর নানা কসরত করেও হয়তো তেমনটা আঁচড় কাটতে পারিনি মনে। অথচ এই স্বপ্নদ্রষ্টার বাস্তব উপমা 'বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়' এবং তার পাশাপাশি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা 'ডাক দিয়ে যাই'। এরা স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন সাজায় এবং স্বপ্নের পথে হাঁটে হাত ধরাধরি করে। 'বয়স-পেশা বাধা নয়, সবার জন্য শিক্ষা চাই।' -এই শ্লোগানকে ধারণ করে শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়া লক্ষ তরুণ-যুবকের স্বপ্ন-সারথী হয়েছে তারা। বাউবি ভিত্তিক শিক্ষা-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চর্চা ও কল্যাণমূলক সংগঠন 'ডাক দিয়ে যাই' উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে 'বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়' এর সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এতদসংশ্লিষ্ট সকলেই সাধুবাদ প্রাপ্য।


বিজ্ঞানী আইন্সটাইন বলেছেন, জ্ঞানের চেয়েও কল্পনা (স্বপ্ন) অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবশেষে আবারও বলি, এমন স্বপ্নবাজ হোন, যেন স্বপ্ন পূরণে মরিয়া উঠতে পারেন। স্বপ্নহীন জীবন অর্থহীন এবং স্বপ্ন ছাড়া উন্নতি অসম্ভব, কারণ স্বপ্নই জীবনের জ্বালানী। নিজে স্বপ্ন দেখুন, অন্যকে স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করুন। স্বপ্ন পূরণে আত্মপ্রত্যয়ী হোন। আপনি আস্তাকুঁড়ে আছেন এই দুঃস্বপ্ন না দেখে, কোথায় যেতে চান সেই স্বপ্ন দেখুন। চলুন, আশার নাটাই ধরে বিশ্বাসের সুতোয় স্বপ্নঘুড়ি ওড়াই, স্বপ্নসারথী হোক 'ডাক দিয়ে যাই'।


লেখক:

কামরুল ইসলাম জুয়েল

সহকারী অধ্যাপক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments:

Post a Comment