Pages

Wednesday, February 6, 2019

র‍্যাগিং! বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আতঙ্কের নাম!

লেখক: লুৎফুন নাহার কলি 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে  (বশেমুরবিপ্রবির) গত তিনদিন যাবত আলোচনার বিষয় ছিলো র‍্যাগিং (Ragging)। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে বিষয়টা নিয়ে একদিকে যেমন চিন্তিত ছিলাম। আবার অন্যদিকে ragging এর বিরুদ্ধে চমকপ্রদ ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে মাননীয় উপার্চায প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন স্যারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এলো মন থেকেই। দেখুন, র‍্যাগের সেই ভিডিও!



একটা সময় ছিলো Ragging দেয়া হতো মূলত সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যকার সামাজিক আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখতে এবং সামাজিকীকরণ (Socialization) এর একটি গঠনমূলক ধাপ হিসেবে। যাতে জুনিয়ররা নূতন পরিবেশে এসে জড়তা কাটিয়ে নিজেদেরকে খাপখাওয়াতে পারে। তাছাড়া অনেকটা মুক্তপরিবেশে এসে নবাগতরা যাতে অনৈতিক কোনো কাজে জড়িয়ে না পড়ে তার প্রাথমিক একটা সতর্কসংকেত হিসেবে র‍্যাগ দেয়া হতো। আর ধরে নেয়া হতো যে, এতে করে জুনিয়রদের সাথে সিনিয়রদের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক  তৈরি হবে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যেটাকে বলা হয় Ice Breaking Technique at First Glance. কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বতর্মান সময়ে Ragging যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একধরণের আতঙ্কের নাম।

মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত অনুযায়ী Ragging এর ধারণাটা এসেছে মূলত "Stockholm Syndrome" থেকে। ১৯৭৩ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে সংঘটিত এক ব্যাংক ডাকাতির সময় ৬ ব্যক্তি ডাকাতদের হাতে ব্ন্দী হয়। ডাকাতরা তাদের সাথে অনেক অশালীন ও অশোভন আচরণ করতো। কিছুদিনের মধ্যেই জিম্মিদের মাঝে এমন এক মানসিক অবস্থা তৈরি হলো যে, যার দরুণ জিম্মিরা তাদেরই অপহরণকারীদের প্রতি অনুগত্য এবং আবেগপ্রবণ টান অনুভব করতে লাগলো। পরবর্তীতে দেখা গেলো নিজেরা মুক্ত হয়ে ঐ ডাকাত দলকে আইনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে শুরু করলো। এই অদ্ভুতরকমের দূবর্লতাকে  মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় "Stockholm Syndrome"।  আর এটা একধরণের মানসিক ব্যাধির লক্ষণ। আর  Rag যারা দেয় তারা মূলত জুনিয়রদের এমন দূবর্লতাটাই প্রত্যাশা করে। একজন মনোবিজ্ঞানের সদস্য হিসেবে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার মূলে প্রদান কারণগুলো রয়েছে বলে আমি মনে করছি, তা হলো-
১. Sense of being superior- নিজেকে সিনিয়র বা বড় পদের কেউ হিসেবে জানান দেয়া।
২. Power assertion as senior- সিনিয়র হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার।
৩. Suffer from Interiority complex- হীনমন্যতায় ভোগা।
৪. Dominating Character by born- অন্যের উপর কতৃর্ত্ব করার সহজাত প্রবৃত্তি।
৫. Perceive threats- অন্যের উপস্থিতিকে নিজের জন্য ভয়ের কারণ মনে করা।
৬. Desire for acceptance- জুনিয়রদের কাছে  গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো।
৭. Fear of Rejection- অবমূল্যায়িত হবার ভয়।
এই ragging এর ফলশ্রুতিতে একজন ভিকটিমকে তীব্র মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। যেমন-
১. Social Isolation (সামাজিক বিচ্ছিন্নতা) 
২. Anxiety (উদ্বিগ্নতা)
৩. Threatening for personality (ব্যক্তিত্ত্ব বিকাশে হুমকি)
৪. Distress (তীব্র মানসিক চাপ)
৫. Depression (বিষণ্নতা) 
৬. Lower self-esteem and self-confidence which also causes poor academic performance. (আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, যার দরুণ পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়া)     
৭. Hopelessness and helplessness (আশাহত হওয়া এবং নিরুপায় অনুভব করা)
৮. Tendency to criminal activity to take revenge from opposite thus stimulate violeting laws.(প্রতিশোধ স্বরূপ অপরাধপ্রবণ কাজে লিপ্ত হওয়া যা আইনবহির্ভূত)
৯. In extreme case suicidal attempt taken by victim due to shame and humiliation faced from academic environment as well as society (চরম পর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া)।

আসুন এবার নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখি- সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠে এসে আমি কী করছি আর কী শিখছি? নিজেকে ম্যাগনিফাইং কাঁচের নিচে ফেলে বড় করে দেখার জন্য আর সাময়িক আনন্দ পাওয়ার নিমিত্তে নিজের মনুষ্যত্ববোধকে বিকিয়ে দিচ্ছি, মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এসব করে আপনি আর যাই হোন না কেনো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আপনি নন। আপনার পরিচয় একজন অপরাধী, যার সবোর্চ্চ শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করি।

প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আসুন এই অসুস্থ মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে গঠনমূলক কাজ করে আপন ভবিষ্যত বিনির্মাণ করি এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
_____________
লুৎফুন নাহার
প্রভাষক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ
বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ-৮১০০

No comments:

Post a Comment