Pages

Saturday, May 6, 2017

কাজল মাখা চোখের জল


তোর কাজল মাখা চোখের জল মুছে নিলাম কম্পিত করতলে, আর আমার পাথর চাপা হৃদয়ের নিঃশব্দ ক্রন্দন মিশে যাক মৌন শতদলে...

প্রশ্বাস আছে বলেই মানুষের প্রতিমুহূর্তের নিরাকার বিশ্বাস, শ্বাস থেকে নিশ্বাস জীবনে চুপিসারে কত ভাঙা-গড়ার আশ্বাস। বোধ থাকলেই কি সবসময় মনকে দেয়া যায় প্রবোধ, অনুরোধে বা প্রতিরোধে গতিময় সময়ের হয় না কভু গতিরোধ। এ সবই সময়ের চাওয়া, জীবনের বাস্তবতা।



আচ্ছা, তোর কি মনে আছে কবে-কোথায় আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো, কথা হয়েছিলো? আমার আজ পষ্ট মনে পড়ছে না। তবে আমি অভ্যাগত ছিলাম না, এটুকু মনে আছে। আত্মীয় হবার আগেও অনাত্মীয় ছিলাম না। সম্ভবত ২০০৭ এ শেরপুরের গজনীতে পারিবারিক ট্যুরে অংশগ্রহন, তারপর মুক্তাগাছা রাজবাড়ির বিবর্ণ দেয়ালে উচ্ছ্বসিত সময়ের স্মৃতিরেখা। এরপর তো আর সময় থেমে থাকেনি, প্রায় প্রতিটি শুভ কাজে কিছু না কিছু সংযোগ ছিলো আমার। আর এসবের নেপথ্যে ছিলো তোরই একমাত্র বড়বোনের ইচ্ছা-অনুপ্রেরণা, যে নিজে স্বপ্ন দেখার ফুরসত না পেলেও তোদেরকে নিয়ে তার স্বপ্ন-পরিকল্পনা নিরন্তর।

এরপর তো ২০১১ সালে পরিবারের সদস্য হয়ে গেলাম। আমার পরিবারে আমার কনিষ্ঠ ভাই আর তোর পরিবারে তুই অনুঘটকের ভূমিকায় ছিলি। সারাজীবন তোদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। সম্পর্কে তুই আমার একমাত্র শ্যালিকা, কিন্তু সহোদর বোনের মতোই আপন ভাবি। তোর খালাতো-মামাতো বোনেরা আমার আপন শালী আর তুই আপন বোন, এটাই মনে করি। তোরা সবাই আছিস আর ভালোবাসিস বলেই স্বপ্ন দেখেছি এবং তোদের ভুবনে পাখা ঝাপটাতে এসেছি। আজ তুই ছুটে চললি নতুন জীবনে, নির্বাক শুভ কামনাই করলাম শুধু।

আমার একটা কষ্ট ছিলো আমার সহোদরার বিয়েতে আমি থাকতে পারিনি। সেই ২০০০ সালে আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় একমাত্র ছোটবোনের বিয়ে হয়ে যায় আমার অনুপস্থিতিতে। এরপর বন্ধুদের ছোটোবোনের বিয়েতে সেই কষ্টটা মোছনের সুযোগ খুঁজতাম। প্রিয়বন্ধু আজিমের সহোদরা মুসলিমার বিয়েতে সেই সুযোগ কিছুটা পেয়েছিও বটে। আর তুই ছোটবোন হবার পর তো সেই সুযোগটা পুরোপুরি এসে গেলো ভেবেছিলাম। অনেক আয়োজন-উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত করার স্বপ্ন ছিলো। না, এবারও মিস করলাম সেই নিঃসংকোচ আনন্দ উপভোগের। আজ জীবন থেকে বুঝলাম আনন্দ উপভোগ আর কর্তব্য পালন এক জিনিস নয়।

আজ ফজরের সালাত শেষে যখন অনুভুতিগুলোতে শব্দযোজন করছি তখন তুই নতুন সংসারে হয়তো চিরায়ত কর্তব্য পালনে ব্যস্ত। গতকাল কনে বিদায়ের সময় তোর নেত্রকোণায় একবিন্দু কাজল কালো জল আমার হৃদয়ে নীরব মাতম তুলেছিলো, চেষ্টা করেছি সযতনে মুছে দেয়ার। সবসময় তোকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছি, হয়তো এটা সবসময় তোর পছন্দ ছিলো না। ধরে নিস এটা আমার স্বভাবজাত পাগলামো। এরজন্য মাঝেমধ্যে মান-অভিমান এসে উড়কো ঝামেলা করতো, তবে তুই মুখ তুলে তাকালে সব অভিমানেরা মিশে যেতো নিঃশব্দতায়।

গতকাল সবার অনুরোধ ছিলো তোর সঙ্গে তোর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার, তুই একবারও বললি না, 'ভাইয়া, চলুন না'। হয়তো সময়ের আড়ষ্টতায় বলতে পারিসনি। তুই বললে কথা ফেলতে পারতাম না, যেতে হতো নিশ্চয়ই। যাক তুই বলিসনি তাই গেলাম না। সব মনোবাসনা তো আর সবসময় পরিচিতি পায় না। আমার যাচনা না হয় বিন্দু বিন্দু লোচনায় স্থির হয়ে থাকুক। নতুনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিস নিত্য ভালোবাসায়, এ শুভ কামনা করি।

আমাদের আয়োজন বর্ণিল না হতে পারে, তোর জীবনের আয়োজন সুখমুখর বর্ণাঢ্য হোক। সবসময় সত্যের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করিস, নিশ্চয় প্রভু সহায় হবেন। নতুনকেও নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে নিস। স্রষ্টার স্মরণে নিজেকে এবং প্রিয়জনকে নিয়োজিত রাখিস সর্বদা। উল্টো পথে ভঙ্গুর রথে জীবনের সুখ-সফলতা খুঁজতে যাসনে কখনও। নিজের কষ্টগুলো বিশ্বস্তের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ভুলবি না। স্বপ্ন ও সাধনার সুবর্ণ পথ হোক জীবনের পরম লক্ষ্য।

স্নেহ-প্রীতি-ভালোবাসা এবং শুভ কামনা সব তোর জন্য, প্রিয়বোন আমার। তোরা সব্বাইকে নিয়ে ভালো থাকিস এ প্রার্থনা নিরন্তর।

No comments:

Post a Comment