আজ বাবা দিবস। বাবাকে নিয়ে অনেকের লেখা পড়লাম। কিছু লেখা হৃদয়ে হু হু বেদনার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে এসেছে। আমিও কিছু লেখার কথা ভাবলাম। কিন্তু কী লিখি, কোন বিষয়ে লিখি- ভেবে পাচ্ছি না। আমার সবই তো বাবার হাতে গড়া।
বাবাকে ভালোবাসি এটা প্রকাশ করা বড়ই দুঃসাধ্য। ভয় পাই এটাই বেশি দৃশ্যমান। বাবার সামনে নুয়ে পড়ি প্রতিনিয়ত। আমার বাবা মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন, একজন হাই স্কুল শিক্ষক। এখনও তিনি শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। তাঁর জীবন বড় বেশি দুঃখঘেরা। অথচ আমাদের জীবনে যাতে দুঃখ ছুঁতে না পারে সেজন্য এখনও স্কুল, ব্যবসা (ফার্মেসি ও লাইব্রেরি) ও ইমামতি করে যাচ্ছেন সমানতালে।
বাবা ছোটবেলায় তাঁর জন্মদাতাকে (হাছন আলী) হারিয়েছেন। তারপর তিনি কত কষ্টে জীবন গড়েছেন, আল্লাহই ভালো জানেন। মায়ের মুখে শোনা তাঁর কষ্টের একটি ঘটনা মনে এলে খুব কান্না পায়। বাবা কিশোর বয়সে একবার তাঁর নানার বাড়ি যাবেন। কিন্তু তাঁর কোনো ভালো জামা নেই। যেটা আছে, সেটাও পিঠের দিকে ছেঁড়া। অবশেষে বাধ্য হয়ে গ্রীষ্মের কাঠফাটা গরমের মধ্যে ছেঁড়া জামা ঢাকতে সুয়েটার গায়ে দিয়ে নানা বাড়ি গিয়েছেন। হয়তো তখনকার আর্থ-সামাজিক অবস্থাটাই ছিলো প্রাচুর্যহীন। কিন্তু আব্বু কখনই আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে দেননি।
বাবার হাতেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি। তাঁর হস্তলিপি খুবই সুন্দর। তাই হয়তো আমার হাতের লেখাও সুচারু হয়েছে। খুব মনে পড়ে শৈশবের দিনগুলো। বাবার সাইকেলের পেছনে বসে স্কুলে যাওয়া-আসা। সকাল-সন্ধ্যা আব্বুর দোকানে ও স্কুলে পড়তে বসা। সাইকেলের পেছনে বসে সারাদিনের পড়া মুখস্থ বলতে হতো। ইশ! কী সুশৃঙ্খল ছিলো সেই দিনগুলো।
রমযান মাস এলেই আমাদের দোকানের সব ঔষধ ও বইপত্রের হিসাব করা হতো। মামারা আব্বুকে হেল্প করতেন, আমিও সঙ্গে থাকতাম। খুব উৎসব উৎসব লাগতো তখন। এরপর ১৯৯৭ সালে ছোটো খালার বিয়ের পূর্বরাতে এক দুঃস্বপ্নময় অগ্নিকাণ্ডে আমাদের ব্যবসা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আব্বু ব্যবসায়িকভাবে নিঃস্ব হয়ে যান। এরপর আবার নতুন করে শুরু করেছেন, কিন্তু পূর্বের জৌলুস আর ছিলো না ব্যবসায়। বাবার সেদিনের কষ্ট প্রত্যক্ষ করেছি নীরব অশ্রুপাতে।
একটু বড় হবার পর থেকেই আব্বুর জন্য দুপুরে স্কুলে এবং রমযান মাসে ইফতারির পর দোকানে খাবার নিয়ে যেতাম। আব্বুর সঙ্গে ঐ খাবার খেতে কী মজা লাগতো, এটা বলে বুঝানো যাবে না। আব্বুর হাতে মাখানো সেই ভাতের স্বাদ আজও খুঁজি, কিন্তু আর পাই না। আমিও এখন বাবা। বাবারা সন্তানকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে পারলেই বেশি তৃপ্তি পান, এটিই এখনকার উপলব্ধি।
বাবাকে নিয়ে কত কিছু লেখার আছে। বাবাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। বাবা এখনও আমাদের জন্য কষ্ট করে যাচ্ছেন নিরন্তর। এখনও পারিনি বাবার মতো বাবাকে সময় দিতে। বাবারা স্বপ্ন দেখেন সন্তান মানুষ হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ সন্তানকে সব বাবাদের স্বপ্ন পূরণে সারথী হবার তৌফিক দিন। আমার বাবাকে হায়াত দারাজ করুন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা।
No comments:
Post a Comment