Pages

Sunday, January 4, 2015

ডাটা এন্ট্রি: আউটসোর্সিং শুরুটা যেভাবে…



কিভাবে লেখা শুরু করি, দ্বিধান্বিত। এমন দ্বিধা নিয়েই শুরু হয়েছে আমার আউটসোর্সিং। আমি কি জব পাবো? আমার প্রোফাইল কিভাবে ১০০% করব? কোন কাজটা আমি পারব? কিভাবে জব এ এপ্লাই করব? কত প্রশ্ন মনে, আরও কত দ্বিধা। প্রথমে যারা আউটসোর্সিং করে তাদের কথা শুনে শুনে একাউন্ট খোলার পরও দ্বিধান্বিত আমি কাজ শুরু করতে পারিনি। তারপর আমাদের গুরু ‘মোঃ আমিনুর রহমান’ এর উৎসাহে এবং তাঁর লেখা “আউটসোর্সিং শুরুটা যেভাবে এবং শুরু করার পর” বইয়ের বদৌলতে আমি এখন একজন ছোটো-খাটো ফ্রিল্যান্সার।


আমি কম্পিউটারের কোনো ল্যাংগুয়েজ/প্রোগ্রামিং জানিনা। এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট এবং প্রাথমিক গ্রাফিক্স জ্ঞান আছে আমার। আমিনুর স্যারের তত্বাবধানে টিএসসি-তে ওয়েব ডেভলপমেন্টের একটা বিশেষ শর্তমূল্যের কোর্স চালু ছিলো তখন। সেখানে যোগ দিলাম। কিন্তু ব্যক্তিগত ঝামেলায় সবগুলো ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারিনি। ওয়েব ডেভলপমেন্টও শেখা হলো না। এর মধ্যে নতুন করে ওডেস্কে একাউন্ট খুলে নিয়েছি। কিন্তু জবে এপ্লাই করলেও কোনো জব পাইনি। আমাদের গ্রুপের কেউ কেউ ক্লাস করা অবস্থায়ই জব পেলেন। কিছুটা ব্যর্থ মনোরথ।
এর মধ্যে বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেলো। হাতে টাকা-পয়সা থাকে না মাস শেষে। চাকুরীর পাশাপাশি কিছু একটা করা খুবই প্রয়োজন। আবার কোনো কাজে মনও বসাতে পারি না। একটু থিতু হতে পারলে ভালো করার স্বপ্ন বুনি। আবার অনলাইনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। কিছুদিন পর আমাদের গুরুর পরামর্শ ও সহযোগিতায় আবার শুরু করলাম। এখন কাজ পাচ্ছি, কাজ করছি। গত দুই-তিন মাসে প্রায় এক হাজার ঘন্টা কাজ করে ফেলেছি। অবসরে কাজ করতে ভালোই লাগে। কাজ করতে গিয়ে নতুন নতুন অনেক বিষয় জানা যায়, জানার আগ্রহ তৈরি হয় এবং নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
আমি খুব বেশি কিছু পারি না। যা যা পারি সেটাতেই আবেদন করি। আর জানার জন্য ‘গুগল’ মামা তো পাশেই থাকেন সবসময়। তাহলে আর চিন্তা কি। যাদের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান আছে তারাই অনলাইনে কাজ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা কৌশুলী হতে হয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, জব পাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে নজর রাখতে হবে- সবার আগে এপ্লাই করা, কম রেটে এপ্লাই করা, ক্লায়েন্টর কোনো প্রশ্ন থাকলে কৌশলে উত্তর দেয়া। এ বিষয়গুলো “আউটসোর্সিং শুরুটা যেভাবে এবং শুরু করার পর” বইয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। আমার কাজ শুরু যেটা দিয়ে সেটা ‘ডাটা এন্ট্রি এন্ড ই-মেইল সার্চ’। তাই এ বিষয়ে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে কিছু লেখার চেষ্টা করব।
আউটসোর্সিং জগতে ‘ডাটা এন্ট্রি এবং ইন্টারনেটে রিসার্চ’ একটি সহজ ও কমন কাজ। সবসময়ই এই কাজের চাহিদা থাকে। এর মধ্যে ওয়ার্ড ফাইল থেকে এক্সেলে তথ্য এন্ট্রি, পিডিএফ ফাইল থেকে ওয়ার্ড/এক্সেলে কনভার্ট করা, নির্দিষ্ট Key Word দিয়ে কোনো কোম্পানীর ওয়েবসাইট, ই-মেইল, ফোন, ঠিকানা, ইত্যাদি খোঁজ করা এবং তা এক্সেলে সাজানো অথবা ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে ওয়ার্ড/এক্সেল ফাইলে জামানো, এমন হরেক রকম তথ্য সংগ্রহের কাজ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া এক সাইটের তথ্য অন্য সাইটে কপি-পেস্ট করা, ফেসবুক পেইজে লাইক সংগ্রহ করা, বিভিন্ন সাইটে একাউন্ট খুলে দেয়া, ইত্যাদি। আর এসব কাজ যে কেউ সহজে করতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় ক্লায়েন্ট বুঝিয়ে দেয় কিভাবে কাজ করতে হবে। তাই কাজ করা সহজ হয়, নতুন কিছু শেখাও হয়।
কিভাবে ই-মেইল এডরেস খুঁজবেন? ধরুন, কোন ক্লায়েন্ট অনেকগুলো কোম্পানীর ওয়েবসাইট/কোম্পানীর নাম-ঠিকানা দিয়েছে। আপনাকে ঐ কোম্পানীর যোগাযোগের ই-মেইল খুঁজে দিতে হবে। কোম্পানীর ওয়েবসাইটে কনটাক্ট ফরমে হয়তো পেয়ে যাবেন। যদি নির্দিষ্ট সাইটের কোথাও ই-মেইল খুঁজে পাওয়া না যায়, অথবা হিডেন (অদৃশ্য) থাকে, তাহলে এভাবে খুঁজলে ঐ সাইটের আন্ডারে কোন ই-মেইল থাকলে পেয়ে যাবেন আশা করি। যেমন ধরুন, www.abrittiacademy.com এই সাইটের ই-মেইল পাচ্ছেন না। তাহলে “abrittiacademy.com” এটুকু ইনভার্টেড কমা দিয়ে গুগলে সার্চ দিন। অনেকগুলো লিংকসহ গুগলের একটা পেইজ আসবে। ওখানে পেয়ে যাবেন কোন না কোন ই-মেইল এডরেস। এক্ষেত্রে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বেছে নিতে হবে কোনটা এই ওয়েবসাইটের সঙ্গে সাযুজ্য হয়। নাম-ঠিকানা/ফোন নম্বর মিলিয়েও এটা নির্দিষ্ট করা যাবে।
এখনও অনেকে অনলাইনে ইনকামের কথা শুনলে জানতে চায়- কত টাকা ইনভেস্ট করেছেন? হঠাৎ উধাও হয়ে যাবে না তো? এসব প্রশ্ন করেন না জানার কারণে। এর জন্য কোনো ইনভেস্ট করতে হয় না, যারা কাজ করেন তাদের কারও হেল্প নিলেই আপনি কাজ করতে পারবেন। তবে কেউ যদি WordPress, HTML, CSS, Graphics ইত্যাদি কোনো প্রোগ্রাম শিখতে চান, তাহলে কোথাও কোর্স করে নিতে পারেন অথবা অনলাইনে ফ্রি অনেক টিউটোরিয়াল আছে সেখান থেকেও শিখতে পারেন। নিজেকে দক্ষ করে নিতে পারেন কোনো বিষয়ে।
আবারও বলছি জব পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আমার পরামর্শ হলো- প্রথম দিকে জব পেতে একটু কষ্ট হবে, তবে ধৈর্য না হারিয়ে জবে এপ্লাই করে যাবেন। কম রেটে এপ্লাই করে করে, কিছু কাজ করে সুযোগ বুঝে ক্লায়েন্টকে রেট বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ করতে পারেন, অনেক সময় ক্লায়েন্ট খুশি হলে বাড়িয়ে দেবে। আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখি, আউটসোর্সিং জগতে নারীদের বেশ কদর আছে। নারী ফ্রিল্যান্সারদের খাটো করার জন্য বলিনি। বাস্তবতাটা শেয়ার করলাম। নারীদের প্রতি ক্লায়েন্টদের একটু বেশিই সহানুভুতি থাকে। তাই নারীরা আউটসোর্সিংয়ে সফলতা পেতে পারেন।
বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ‘ডাটা এন্ট্রি এবং ইন্টারনেটে রিসার্চ’ কাজের প্রচুর চাহিদা দেখা যায়। জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসর সার্চ-জব পেজ থেকে দেখা যায়, প্রতি মুহূর্তে এই ধরণের জব ওপেন আছে যেখান ক্লায়েন্টরা ফ্রিল্যান্সার চাচ্ছেন। এসব ভালভাবে জানেন এমন ফ্রিল্যান্সারের মাসিক আয় বিশ-পঁচিশ হাজার টাকারও বেশি হতে পারে এই আউটসোর্সিং জগতে। এমন অনেক নজিরও আছে। তাই যেটুকু জানেন সেটুকু দিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। সাফল্য আসবেই। সিনিয়র কারো হেল্পও নিতে পারেন। আর ডাটা এন্ট্রির মতো সহজ কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে নতুন নতুন প্রোগ্রাম ও কাজ শিখে নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পারবেন।

জুয়েল আদীব

No comments:

Post a Comment