ফেলে আসা শৈশব...

ফেলে আসা শৈশব...

১০ আগস্ট ২০১৩। ঈদের পরদিন। ফিরে গেলাম সেই শৈশবে। আজ থেকে দুই যুগ আগে। কত স্মৃতি, কত দুষ্টমি ভরা দিনগুলো। একটু-আধটু খুনসুটিও হতো মাঝে মাঝে, সেই দুরন্ত শৈশব। আমার ছেলেবেলা। ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের ডালে পাখির বাসা খোঁজার নৈঃশব্দময় সময়গুলো। সূর্য মাথায় নিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবোডুবি, সেই রক্তচক্ষু করা দুপুরগুলো। রাতদুপুরে হোস্টেলে ক্যারাম খেলা আর সকালবেলা ধরা পড়ে আনিস স্যারের কান মলা (মোরগের সেলাই) খাওয়ার মুহূর্তগুলো। আজ কত পেছনে ফেলে আসা। সেই পুরনো পথে যাওয়া হয়, পুরনো দিনে আর ফিরে যাওয়ার উপায়হীন বর্তমান। মন থেকে হুহু করে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়।


অতীতে ফিরে যাওয়ার ফুরসত আর কোথায়? তবে ঈদের পরদিন ফেলে আসা শৈশবের বেশ কয়েকজন বন্ধুর সাথে মিলিত হওয়ার মওকা মিলে যায়। ছিলাম বাংলাবাজার কয়েকজন বন্ধুর সাথে। সেখানে ছিল মহিউদ্দিন, টিটো, কামরুল, মিজান ভাই। দেখা হয়েছিল আরেক ক্লাসমেট চাপ্রাসী বাড়ির মহিনের সাথে। এ সময় ফোন করলো, হানিফ আমার প্রাইমারির ক্লাসমেট। ওরা অনেকে আমার জন্যে পেশকারহাট অপেক্ষা করছে। রাত সাড়ে ন’টার দিকে দেখা হলো তাদের সাথে। আমার শৈশবের বন্ধুদের সাথে। দেখা হলো আমার প্রিয় প্রাইমারি স্কুলের মাঠের ধারে। যে মাঠে কত খেলাধুলা, কত দৌড়-ঝাপ, ফুটবল খেলে কাদা মাখামাখি, আরও কত দৃশ্যপট। মিষ্টার, সুমন, হানিফ, রেজোয়ান, খালেক, শহীদ, খোকন, মামুন, আনুর ভাগিনা (নামটা মনে পড়ছে না) সবার সাথে দেখা হলো, কথা হলো। টি-স্টলে যোগ দিলো মান্নান। শেষে চা খেয়ে বিদায় নিলাম। কী ভালো না লেগেছিলো। একটু একটু বৃষ্টি। ফোটা ফোটা বৃষ্টির পানিকে মনে হচ্ছিল, আমার ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো রাতের আকাশ থেকে ঝরে পড়ে জামা-কাপড়-শরীর ভেদ করে মনের গহীনকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।

কত নাম আর মনে নেই। কত মুখ সময়ের ধুলোয় ধূসরিত। তবু কিছু নাম, কিছু মুখ মনের জানালায় উঁকি দেয়। আমার শৈশবের চেনামুখগুলো। কে, কোথায় আছ? ভালো আছ তো, বন্ধু? মনে পড়ে নামগুলো- মেয়েদের মধ্যে- জাহানারা নিপু, নাহিদা, খুকি, আলেয়া। ছেলেদের মধ্যে- মিস্টার, সুমন, হানিফ, কাজী, রেজোয়ান, ছানাউল্লাহ, খালেক, আনু, শহিদ, রুবেল, আজাদ। অনেকের মুখগুলো মনে আসে, নাম হাতড়িয়ে আর পাইনা এখন। ক্ষমা করো বন্ধুরা, তোমাদের অনেকের নাম মনে রাখতে পারিনি, আমি অধম কামরুল ইসলাম জুয়েল।

আবার হয়তো পথে-প্রান্তরে, জীবনের ঘুর্ণিপাকে দেখা হবে। ভালো থাকিসরে প্রিয় বন্ধুরা...